তাকিয়ে দেখলুম রিয়াকে। রিয়াও দেখছিলো আমাকে। দু'জনেই বোট হাঁকছিলাম। তখনই মানুষটা এসে হাজির। ওকে দেখে রেগে বললাম, -'কী রে লুঙ্গি পরে আসছিস কেন? তোকে না বলায় পাঞ্জাবি পরে আসতে।' পারশালদা রিয়াকে দেখলো। বললো, -'যাবি ফিরে সে যদি লুঙ্গি পরে তাহলে আমি পরলে দোষ কোথায়? ওর কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম, -'কী বলছিস!' পারশালদা লুঙ্গি পরে বিয়ে করতে পারে।' -'হ্যাঁ, সবাই রেডি। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন।' আমি দৌড়ে পারশালদার বাড়ি গিয়ে দেখি সে লুঙ্গি আর ফতুয়া পরে আছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, -'পারশালদা আপনি এসব পরে বিয়ে করতে যাবেন!' -'হ্যাঁ রে, সব বিয়েতে জামাইরা তো শেরওয়ানি পরে যায়। আমি লুঙ্গি পরে যাবো। আমার বিয়ে আমি করবো, সমাজের নিয়ম কেন মানবো!' -'তো আপনি করে বাড়ি যাবেন কীসে করে? কোনো সাজানো গাড়ি তো দেখছি না?' পারশালদা তখন উঠোনের দিকে ইশারা করলো। সেদিকে তাকিয়ে দেখি সুপারি গাছের একটা পাতার খোল কেটে সেটা ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আমি জোরগলায় বললাম, -'পারশালদা আপনি এই সুপারির খোলে বসে বিয়েতে যাবেন?' -'হ্যাঁ, সবাই তো গাড়ি নিয়েই যায়। আমি এই সুপারির খোলে বসে যাবো। চারজন লোক ঠিক করেছি। ওরা টেনে নিয়ে যাবে আমাকে। আমার বিয়ে আমি করবো, সমাজের নিয়ম কেন মানবো!' আমি আর কিছু বললাম না। পারশালদা সুপারির খোলে উঠে বসলো। চারজন লোক সেটা টানতে লাগলো। আমরা সবাই তার পিছনে হৈচৈ করতে করতে গেলাম। বিয়ের প্যান্ডেলের সামনে গিয়ে পারশালদা খোল থেকে নামলো। অনেক ছেলেমেয়েরা সেটাতে পা দিয়ে আছে। টাকা না দিলে বরযাত্রীকে ঢুকতে দিবে না। আমি বললাম, পারশালদা, টাকা দিয়ে দেন।' পারশালদা উত্তরে বলল, 'চারপাশটা ভালো করে দেখ।' আমি তাকিয়ে দেখি আমরা যে রাস্তার উপর পা দিয়ে আছি তার দুইপাশেই পুকুর। এই রাস্তা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা দিয়ে ভেতরে ঢোকা যাবে না। আমি ঘুরে পারশালদাকে কিছু বলতে গিয়ে দেখি সে নেই। জানপাশের পুকুরে তাকিয়ে দেখি পারশালদা লুঙ্গি গোঁজ দিয়ে পু করে নেমে সাঁ ভরাচ্ছে। আমি চেঁচিয়ে বললাম, -'আরে, পারশালদা কী করছেন!' পারশালদা চেঁচিয়ে উত্তর দিল, 'সবাই তো হেঁটে বিয়ে বাড়িতে যায়, আমি সাঁ তরে যাবো। আমার বিয়ে আমি করবো, সমাজের নিয়ম কেন মানবো!' বললো বটে, -'তাঁত তাকে তার মতো বিয়ে করতে দেন। আসেন আমরা ভেতরে ঢুকি। আমি ধমক দিয়ে বললাম, -'তুই তো ভূত। মানুষের সমাজের নিয়মকানুন তো জানিস না। কবে এই বিষয়গুলো জানতে পারলে কী মনে করেছিস?' দৌড়ে পুকুর পাড় গেলাম। পারশালদা উঠে এসেছে পুকুর পার হয়ে। হাতে বড়ো একটা পানাস মাছ। আমাকে দেখে হেসে বলল, -'দেখ পু ক্কুর থেকে কত বড়ো মাছ ধরেছি।' আমি অবাক হয়ে বললাম, -'পারশালদা বিয়ের দিন পানাস মাছ দিয়ে কী করবেন!' -'জামাইরা তো বিয়ের দিন, আস্ত খাসি বা গরুর রান খায়। আমি খাবো এই আস্ত পানাস মাছের ফ্রাই। আমার বিয়ে আমি করবো, সমাজের নিয়ম কেন মানবো!' পারশালদার
| Title | অদভূত (হার্ডকভার) |
| Author | তুর্জয় শাকিল,Turjoy Shakil |
| Publisher | কলি প্রকাশনী |
| ISBN | |
| Edition | 1st published 2022 |
| Number of Pages | 48 |
| Country | Bangladesh |
| Language | Bengali, |
0 Review(s) for অদভূত (হার্ডকভার)