বলয়ায় শাহ (১৮১১-১৮৬৯) কবি ও সাধক ছিলেন। ঝিনাইদহে তাঁর নামে একটি মাজার আছে পান্থ শাহ্ কিংবা পাগলা কানাইয়ের নামে। কোনো কোনো গবেষক লালন সাঁইকেও ঝিনাইদহের জাতক প্রচার করলেও তিনি শেষতক কুষ্টিয়ারই সন্তান। ঝিনাইদহে তাঁর শিষ্য অনেকে আছেন। কিন্তু লালন তো নদিয়াভুক্তির তথা কুষ্টিয়ার। সে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। ঝিনাইদহ তো কুষ্টিয়ারই সারস্বত অঞ্চল। তাই ঝিনাইদহবাসী লালনকে নিয়েও গর্ব করে যেমন ফরিদপুর কিংবা সিলেটের মানুষও লালনকে নিজের করে ভাবে। লালন এখন কালিক ও আঞ্চলিক সীমার ঊর্ধ্বে।
ঝিনাইদহ অঞ্চল মরমিসাধনার জন্য উর্বর ক্ষেত্র। পাগলা কানাই (১৮০৯-১৮৮৯), পান্থ শাহ (১৮১১-১৮৬৯), অমূল্য শাহ (১৮৭৯-১৯৪২) তকচাদ শাহ (১৮৮৭-১৯৬০) প্রমুখ মরমিকবির পাশাপাশি অন্ধ আর অন্ধ্র প্রকৃতটা এদের মধ্যে বলয়ায় শাহীর নাম আমরা উচ্চারণ করতে পারি প্রায় শ্রদ্ধায়। বলয়ায় শাহ্ অবশ্যম্ভাবী কিংবা অনিবার্যভাবী সাধু ছিলেন না। ছিলেন গৃহবাসী সাধক। সামাজিক ও সংসারিক মানুষ হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। করাচি থেকে এইচএমভি গান ভাজার কিংবা ঝিনাইদহ কোর্টের প্রসেস সার্ভেয়ার হলেও ছিলেন শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির সেবক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন, সাহিত্য সংগঠন করে নিয়মিত সাহিত্যসভার আয়োজন করেছেন, সাহিত্য-সংকলন প্রকাশ করে স্থানীয় সাহিত্যিকদের আত্মবিকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। আর ভেতরে-ভেতরে প্রোথিত রয়েছে তাঁর মরমিরক্তবীজ। আধুনিক সমাজজীবনে বাস করেও তাঁর লোকচেতনা অম্লান রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের আকাদেমিক অসাম্প্রদায়িকতার বাণীত তিনি প্রকাশ করেছেন হিন্দু মুসলিম অভেদ বোধায় ও ওর সমস্বরে, কেউ পূজা কেউ রোজা করে আকারে আর নিরাকারে।
মরমিকবিরা এইসব ভেদবুদ্ধির ওপরেই অবস্থান করেছেন। জাগতিক সত্তার ভেতরেও দেবত্ব ও অধ্যাত্ম উপলব্ধি প্রকাশ করেন। বলয়ায় শাহ্ও তাঁর ব্যতিক্রম নন। তাঁর একটি দেহতত্ত্বের গানে দেখি চালের উপরে সবজি চাষী বানায় এবার ফসল যদি চায় ফলাতে হাল চালায় মন জমির ওপর দম্ভ চুয়ে চুয়ে চাখে, কেননা মন জমি চষে ও যে ধুলো তুলো যতন করে, দিয়ে জারিত জৈব সার।
এই গানের উপমানসমৃদ্ধ বিশ্লেষণে করলে সাধক রাববীন্দ্রনাথের সঙ্গেই তুলনীয় মনে হতে পারে। আধ্যাত্মিক পাত্রেও বলয়ায় শাহর পারদর্শিতা লক্ষণীয়। গুরুতত্ত্বের একটি বাণী উদ্ধার করে তাঁর মানসিক বিনয় ও আত্মনিবেদনের স্থিতাবস্থা অনুভব করা যেতে পারে গুরু, দেখা কি পাবো তোমারে, এই সাধুর বাজারে।
তুমি ধাঁরে করো দয়া সে যেন পায় দেখা তোমারে আমি অতি মূঢ়মতি না জানি ভক্তিস্তুতি, তুমি মোরে করো গতি, সুমতি দাও আমারে।
বলয়ায় শাহ্ কেবল মরমিকবি ও সাধকই নন, আধুনিক কবিতারও চর্চা করেছেন। কিন্তু আমরা তাঁর মরমিবাদের ফসলটুকুর পরে তুলে ধন্য হতে চেয়েছি। তাঁর অন্তঃত্ব রচনা থেকে নির্বাচিত কয়েকটি গীতি কবিতার সংকলন প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরই সন্তান, অধ্যাপক কবি সুফিয়া শাহ্ এবং স্যানাদানদের আদর্শের অনুসারী ও প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যকর্মী মো. ইমরান হোসেন। তাঁরা কেবল বলয়ায় শাহ্র রচনার সংকলনই প্রকাশ করেননি, তাঁর জীবনতথ্য সংকলন এবং সমকালীন মূল্যায়নও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এই গ্রন্থ ঝিনাইদহের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তো বটেই, বাংলাদেশের লোকসাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও একটি নবতর উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণীয় হবে। আমি দুই সম্পাদককেই শুভেচ্ছা জানাই। এই গ্রন্থের বহুল প্রচার কামনা করি।
| Title | ঝিনাইদহের মরমী কবি বলরাম শর্মা ও তাঁর কালজয়ী সাধন সংগীত (হার্ডকভার) |
| Author | মোঃ ইমরান হোসেন,Md. Imran Hossain |
| Publisher | কলি প্রকাশনী |
| ISBN | |
| Edition | 1st Published, 2022 |
| Number of Pages | 80 |
| Country | Bangladesh |
| Language | Bengali, |
0 Review(s) for ঝিনাইদহের মরমী কবি বলরাম শর্মা ও তাঁর কালজয়ী সাধন সংগীত (হার্ডকভার)