ভূমিকার কিছু অংশঃ
ভারতবর্ষের ইতিহাস বিরোধ-দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের কথা যত না বলে তার থেকে অনেক বেশি করে বলে সম্প্রীতির কথা, পারস্পরিক সহমর্মিতার কথা। ভারতে মুসলিম আগমনের সময়কাল থেকে যদি আমরা এর ইতিহাস খুঁজি তবে দেখব যে, বৈষয়িক জীবনের প্রতি স্তরে সমঝোতা ও সম্প্রীতির উজ্জ্বল দিকগুলির উপস্থিতি।
হিন্দুধর্মে সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই ধর্মের মূলগ্রন্থ বেদে যেমন নানা দেবতার সঙ্গে এক ঈশ্বর আরাধনার কথা, আবার তেমনি আছে ন্যায়পরায়ণতা ও মানবতার কথা। সেখানে দেব-দেবীর আরাধনার নির্দেশের সাথে সাথে করা হয়েছে মানবতার জয়গান। ঋগবেদে মানবতার বিকাশের সহায়ক সততা, সরলতা, সত্যপরায়ণতা, সংযম, ব্রহ্মচর্য প্রভৃতির ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে। আর দুষ্ট অভিপ্রায়ে শপথ গ্রহণ, মিথ্যাবাদিতা, চক্রান্ত পরচর্চা, অসাধুতা, স্বৈরাচার, ব্যাভিচার, চুরি, হত্যা প্রভৃতিকে অত্যন্ত জঘন্য কাজ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া হিন্দুধর্মে দুঃখের হাত থেকে মুক্তি লাভের জন্য নৈতিক পথকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কঠোপনিষদে উল্লেখ আছে, যে নিজেকে পাপ থেকে বিরত রাখে না, নিজের ইন্দ্রিয়কে সংযত করে না এবং যার মন প্রশান্ত নয়, তার ব্রহ্মোপলব্ধি হবে না। মুণ্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের করুণা ছাড়া মোক্ষ সম্ভব নয়। আর ঈশ্বরের করুণা লাভের প্রধান শর্ত হল নৈতিক জীবন। গীতার ষোড়শ অধ্যায়ে ছাব্বিশটি মহৎ গুণের কথা বলা হয়েছে। এখানে মুক্তিলাভের জন্য চারটি পথের কথা বলা হয়েছে: রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ও ভক্তিযোগ।
0 Review(s) for মুসলমান ও ভারতীয় সংস্কৃতি