কিন্তু এতদিন যারা ছিল অধীনস্থ, সুযোগ পেয়েই তারা হয়ে উঠল নির্দয় জুলুমবাজ। চকিতে গাঢ় অন্ধকারে, হিমশীতল জমিনে দিশেহারা মানুষের মতো হলুনকে তার সন্তানদেরসহ নামিয়ে ফেলা হলো।
বুকের দুধের শিশু মুখ তুলে তাকাল—যে তাঁবুর নকশায় চেয়ে সে একমনে দুধ খেত, তা রূপ নিয়েছে নিকষ আঁধারে জ্বলজ্বলে তারার রাজ্যে। অথচ আশেপাশে কোথাও কোনো কুপির আলো নেই—মায়ের মুখটিও দেখা যাচ্ছে না। ভয় পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। হাঁটতে হাঁটতেই হলুন তার মুখে স্তনবৃন্ত গুঁজে দিলেও কান্না থামল না। মায়ের কোলে শুয়েই হাতড়ে হাতড়ে মাকে খুঁজতে থাকে শিশুটি।
গোত্রপরিজনের এমন হঠাৎ বদলে যাওয়া যেন বদলে দিল তেমুজিনকেও। সেই রাতেই শুরু হলো তার রূপান্তর—এক ভঙ্গুর কাঠি থেকে ধীরে ধীরে সবচেয়ে কঠিন লোহায় পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া। তার কাছে পৃথিবীতে আর কোনো শব্দ নেই—শুধু ক্ষমতা। ক্ষমতা ছাড়া কিছু নেই, ক্ষমা বলে কোনো শব্দও নেই। গোলগাল মুখ ক্রমে চৌকোনা হতে লাগল, চোয়ালের হাড় স্পষ্ট হয়ে উঠল দিন দিন।
মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট পা মাটিতে ফেলতে ফেলতে রাতের আঁধারে তারা এগিয়ে চলে খেন্তিল পর্বতের দিকে। আলো থাকলেও খুব একটা লাভ হতো না, কারণ ওদের চোখ ভরা জল। তেমুজিন দেখল, ভাইবোনেরা বারবার হোঁচট খাচ্ছে, কেউ আছাড় খেয়ে কপাল-হাত ফুলিয়ে ফেলছে। তবু, যেন বাধ্য সৈনিক, নোনাজলে ভেজা মুখ মুছতে মুছতে তারা পিছু হাঁটছে মায়ের।
আকাশের দিকে তাকিয়ে হলুন চিৎকার করে উঠল—
“টেংরি, আমার সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখো!”
তার কণ্ঠে কাতরতার চেয়ে ক্রোধ বেশি, কান্নার চেয়ে অবিশ্বাস বেশি।
Title | মঙ্গোলিয়ার ঘোড়া |
Author | নীলা হারুন,Neela Harun |
Publisher | উপকথা প্রকাশন |
ISBN | |
Edition | 2024 |
Number of Pages | 104 |
Country | Bangladesh |
Language | Bengali, |
0 Review(s) for মঙ্গোলিয়ার ঘোড়া