ফরাসী দেশের ছোট্ট শহরটির নাম লা ব্রিয়ে। সাতাশ বছর বয়সী গরীব কাঠুরে জাঁ ভ্যালজাঁ বাস করে এই শহরে। তার চেহারা দৈত্যর মতো। গায়ে অসম্ভব জোর। কিন্তু মনে কোনো শান্তি নেই ৷
তার বাপ-মা নেই। আছে শুধু এক গরীব দিদি আর তার সাত-সাতটি বাচ্চাকাচ্চা। সবচেয়ে বড়টির বয়স মাত্র বারো বছর, আর সবচেয়ে ছোটটি তো এখনও কথাই বলতে শেখেনি ।
একবার দারুণ শীতে বুকে ঠাণ্ডা বসে গেল ওই বাচ্চাগুলোর বাবার। এই ঠাণ্ডা লাগাই তার কাল হল । কয়েকদিন ভুগে সে মারা গেলে বাচ্চাগুলোর মা ওদের নিয়ে আশ্রয়ের জন্য এল ভ্যালজাঁর কাছে। তখন থেকে সে-ই ওদের বাঁচিয়ে রেখেছে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত কাঠ চেরাইয়ের কাজ করে। লোকটা খাটতেও পারে অমানুষিক । নম্র ব্যবহার, কাজেও ফাঁকি দেয় না। সবাই ওকে খুব ভালোবাসে ।
ভ্যালজাঁর জীবনটা এমনিভাবেই গড়িয়ে-গড়িয়ে চলে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে দারুণ দুর্যোগ ঘনিয়ে এল। শীতের আগেই চারদিকে একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ল । কে বা কারা নাকি আশেপাশের সব জঙ্গল কিনে নিয়েছে। এবারের শীতে আর গাছ কিনতে পারা যাবে না। যারা সাবধানী লোক তার আসন্ন শীতে জমে যাওয়ার ভয়ে গাছের গুঁড়ি কিনে চেরাই করিয়ে জ্বালানী কাঠ গোলাজাত করে রাখল ।
এই সুযোগে ভ্যালজাঁর পকেটে বেশ ভালোই আমদানি হল। কিন্তু অভাবের সংসারে টাকা উড়ে যেতে কতক্ষণ? ভ্যালজাঁও ফতুর হল, শীতও বেশ জাঁকিয়ে এল। ইতিমধ্যে সবার ঘরে কাঠ মজুদ হয়ে গেছে। অতএব কাজ নেই, ভ্যালজাঁ বেকার। ঘরে দিদি আর সাতটা বাচ্চা উপোসের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। ওদের খিদের জ্বালা আর একটানা কান্না তাকে যেন পাগল করে দেয়। সে আর বাসায় থাকতে পারে না। দুর্দান্ত শীতে সারাদিন বাইরে-বাইরে ঘুরে টুকটাক যা কাজ পায় তাই দিয়ে সামান্য কয়েকটি রুটি, কিছু মাংস আর মটর-বাঁধাকপির টুকরো যোগাড় করে এনে ওদের খিদে মেটায় ।...
0 Review(s) for লা মিজারেবল: ভিক্টর হুগো